স্টাফ রির্পোটার :
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ২৭ শহিদের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক কামান্না দিবস পালিত হয়েছে। বগুড়া ইউনিয়নের কামান্না গ্রামে ঐতিহাসিক এ দিবসটি প্রতি বছরের ন্যয় এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেন শৈলকুপা বাসি। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বগুড়া ইউনিয়ন কমান্ড, কামান্না ২৭ শহীদ স্মৃতি সংঘ ও বগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ২৬ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
এ উপলক্ষে ২৬ নভেম্বর সকাল ১১টায় দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার ভূমি বনি আমিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ-১ শৈলকুপা আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই ,
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শৈলকুপা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার রহমত আলী মন্টু, শ্রীপুর উপজেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বিশ্বাস ইকরাম আলী, শৈলকুপা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম. আব্দুল হাকিম আহম্মেদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুন্নবী কালু ও ১০ নং বগুড়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুল প্রমুখ। ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার কয়েকশ’ মুক্তিযোদ্ধা, তাদের উত্তরসুরী এবং ২৭ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যসহ শত শত মানুষ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে যোগ দিয়ে চোখের পানি ফেলে শ্রদ্ধা আর ভালবাসা জানান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান দুলাল।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ২৬ নভেম্বর ভোররাতে শৈলকুপা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বগুড়া ইউনিয়নের কামান্না গ্রামে কুমার নদের উত্তরপাড়ে যুদ্ধকালীন সময়ে মাধব ভৌমিকের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ঘাটি অবরোধ করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা । কথিত আছে ওই গ্রামের এক স্কুলশিক্ষক যিনি পাকিস্তানী বাহিনীর চর হিসাবে কাজ করছিলেন, তার তথ্যের ভিত্তিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ২৭ মুক্তিপাগল যুবক শহিদুল, আলমগীর মৃধা, অধীর বিশ্বাস, গৌর চন্দ্র রায়, মুন্সি আলিমুজ্জামান, হোসেন আলী, শরিফুল ইসলাম, রিযাত আলী মন্ডল, সেলিম বিশ্বাস, কাদের বিশ্বাস, মমিন উদ্দিন শেখ, ওয়াহিদুজ্জামান বিশ্বাস, আব্দুল মতলেব মুন্সী, গোলজার খা, মাছিম মুন্সি, গোলাম কওছার মোল্লা, আব্দুল সালেক মোল্লা, মনিরুজ্জামান মনি খা, খন্দকার রাশেদ হোসেন, আলী হোসেন মোল্লা, তাজুল ইসলাম বিশ্বাস, আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, ছলোমান শিকদার, আনিসুর রহমান, নির্মল বিশ্বাস, মুন্সী আব্দুর রাজ্জাক, গোলাম আকবরকে গুলি করে হত্যা করে। ওই সময় প্রতিবেশি গৃহবধূ রঙ্গ বিবি পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে হত্যার শিকার হন। শহীদদের অধিকাংশের বাড়ি মাগুরা জেলার হাজিপুরে। হানাদাররা এলাকা ত্যাগ করার পর জীবনে বেঁচে যাওয়া কয়েকজনসহ এলাকাবাসী কামান্না হাইস্কুলের খেলার মাঠের উত্তরপাশে কুমার নদীর ধারে ৬টি গণকবরে মোট ২৭ বীর সন্তানকে কবর দেয়া হয়।
শহীদদের পরিবারের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্ত করেন, মক্তযোদ্ধাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছেনা। স্বাধীনতার পর ডজন খানেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য কামান্না গণকবর ও কামান্না ২৭ শহীদ স্মৃতি সংঘ পরিদর্শন করেছেন, জনসভা করে হাজারো মানুষ ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে এই মর্মে আশ্বাস দিয়েছিলেন তার কিছু প্রতিশ্রুতি পুরণ হলেও সেখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনসহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু আজও সে আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি।