শৈলকুপায় গোডাউনের ভিতর ভেজাল গো খাদ্য তৈরী
স্টাফ রির্পোটার : ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গোডাউনের ভিতর ভেজাল গো খাদ্য তৈরীর
অভিযোগ উঠেছে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। খামারিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে
আঃ মজিদ নামের এই ব্যবসায়ী। এতে উপজেলার কয়েক শত খামারি প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। এলাকার
হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে এসব ভেজাল গো-খাদ্য। পচা চাল , গম ও ধানের কুড়ার সাথে মেয়াদ উত্তীর্ণ
আটা মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পশুখাদ্য। শুধু পশু খাদ্যই না এগুলো মাছের খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা
হচ্ছে। গত মঙ্গলবার ৩টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভেজাল গো খাদ্য উৎপাদন ও নানা অনিয়মের
অভিযোগে এই ব্যবসায়িকে ২০হাজার টাকা মোবাইল কোর্টে জরিমানা করেন।
দীর্ঘদিন ধরে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলার কবিরপুরে গো হাটের সামনে গোডাউনের
ভিতর মেশিন বসিয়ে এসব ভেজাল গো খাদ্য উৎপাদন করছে আঃ মজিদ নামে এক ব্যবসায়ী। মাঝে মধ্যে
এই গুদামে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হলেও এই ভেজাল গো খাদ্য তৈরী বন্ধ হচ্ছে না বলে জানান
খামারীরা। তবে ভেজাল গো খাদ্য উৎপাদনকারী মালিকের দাবী তিনি সঠিক গো খাদ্য তৈরী ও বিক্রি করছে।
খামারিরা বলছেন, ভেজাল পশুখাদ্য মারাত্মক ক্ষতিকর, উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করা না গেলে তারা হুমকির মুখে
পড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কবিরপুরের এই গোডাউনে পচা চাল,গম খুদ, ভূসি, কুঁড়া এর
সাথে পচা আটা মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল পশুখাদ্য। গুদামে এসব পশুখাদ্য তৈরি করে বস্তায় ভরে
বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানীর লেভেল ব্যবহার করে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। এই অসাধু ব্যবসায়ী
প্রকাশ্যে ভেজাল পশুখাদ্য তৈরি করে যাচ্ছে। বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে গভীর রাতে এই ভেজাল গো খাদ্য
উৎগাদন করা হয় এই গোডাউনে।আবার কখনো কখনো খুলনা কুষ্টিয়া থেকে রেজিস্টার্ট কোম্পানীর
গো খাদ্য কিনে এনে গোডাউনে রাখা ভেজাল গো খাদ্যের সাথে মিশ্রিত করে তাদের লেভেল ব্যবহার করে
বাজারজাত করা হচ্ছে বলে আরো জানা যায়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি বড় বড় দুটি গোডাউন রয়েছে। একটিতে রয়েছে গোখাদ্য
মিশ্রন করা মেশিন সেইসাথে শত শত বস্তা ভেজাল গোখাদ্য সাজিয়ে রেখে পর্যায়ক্রমে মিশ্রন করা
হচ্ছে আর অন্যটায় বস্তায় ভরে এসব ভেজাল মালামাল বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে।আবার বিভিন্ন
কোম্পানীর শত শত লেভেল বস্তা ভরে রাখা হয়েছে। গোডাউনের মধ্যেই মেশিন দিয়ে পচা কালো চাল ও গম
তার সাথে ধানের কুঁড়া ও মেয়াদ উত্তীর্ণ আটা মেশিয়ে তৈরী করা হচ্ছে ভেজাল গো খাদ্য। সেখানে কাজ
করা কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন দীর্ঘদিন ধরে তারা ভেজাল গো খাদ্য উৎপাদন করে
আসছে। শুধু গো খাদ্যই না মাছের খাবার হিসেবেও বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখা
হয়েছে।
উপজেলার মাঠপাড়া এলাকার খামারি আঃ করিম বলেন, ভেজাল গো-খাদ্যের কারণে গরু যেমন অসুস্থ হয়ে
পড়ে ঠিক তেমনি দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়। ভেজাল গো-খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করা না গেলে দুগ্ধ
খামারিরা হুমকির মুখে পড়বে। একই কথা বলেন আরও ১০-১৫ জন খামারি।
ওই এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন,এই গোডাউনে কয়েকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে
মোটা অংকের জরিমানা করলেও কোন ভাবেই এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।আমরা চাই এই ভেজাল
গোখাদ্য তৈরী করা গোডাউন চিরতরে বন্ধ হোক।
ভেজাল গো খাদ্য উৎপাদনকারী আঃ মজিদ বলেন, পশু খাদ্য ভাল মালামাল দিয়েই আমি তৈরী করছি। খারাপ কোন
মালামাল দিয়ে আমি গো খাদ্য উৎপাদন করছি না। তবে আমার কোন লাইসেন্স নেই।লাইসেন্স কোথা থেকে
দেয় তাও আমার জানা নেই।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মামুন খান বলেন,লাইসেন্স ছাড়া এভাবে গো খাদ্য উৎপাদন করতে
পারে না। গোডাউনে মেশিন বসিয়ে ভেজাল গোখাদ্য উৎপাদন ও অন্যের স্টিকার ব্যবহার করা ঠিক না।
লাইসেন্সের প্রক্রিয়া শুরু করতে অফিসে আসতে বলেছি। এর আগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাকে
জরিমানা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া আক্তার চৌধুরী বলেন, লাইসেন্স না থাকায়
এভাবে তিনি গো খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন না। তিনি যে কাজ করছে এর পুরোটাই অবৈধ। কোন
অনিয়ম মানা হবে না। ইতিমধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা ও সতর্ক করা হয়েছে। এর পরেও
সংশোধন না হলে এর থেকে বড় কিছু করা হবে। আমি প্রানীসম্পদ কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি এই
প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্সের আওতায় আনার জন্য সহযোগীতা করতে।