করোনার কান্ডারী শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেই
এ্যাম্বুলেন্স চালক ফের নিরাপত্তাহীন; হামলাকারী আসামীরা
বে-পরোয়া, সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
স্টাফ রির্পোটার-
করোনা মহামারীর সময়ে রোগী ফেলে, মরদেহ ফেলে পালিয়েছেন স্বজন-পরিজন,বন্ধু-
বান্ধব সহ পরিচিতজনেরা। হাহাকারের এমন দৃশ্য ছিল সর্বত্র । এমন পরিস্থিতিতে
যেন অসহায় রোগীদের কান্ডারী হয়ে ওঠেন ঝিনাইদহের শৈলকুপার মাইক্রো চালক
সামছুদ্দোহা স্বপন। শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের সরকারী
নিয়োগপ্রাপ্ত এ্যাম্বুলেন্স চালক বকুল মিয়া করোনা রোগী বহনে যখন
অস্বীকৃতি জানিয়ে পালিয়ে থাকতেন। নানা অজুহাতে রোগীদের সেবা দেয়া
থেকে বিরত থাকতেন তখন অসংখ্য রোগী নিয়ে বিপদে পড়ে যান হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষ। এমন সময় যেন ত্রাতা হয়ে আসেন ড্রাইভার সামছুদ্দোহা স্বপন। তিনি
হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সে করোনা রোগী বহন, মরদেহ নিতে রাজি হন। অসংখ্য
রোগী নিয়ে ছুটে গেছেন রাজধানী সহ এখান থেকে সেখানে, এ হাসপাতাল
থেকে ও হাসপাতালে, এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন থেকে
স্বপন কে অস্থায়ীভাবে হাসপাতালের একটি এ্যাম্বুলেন্স চালানোর সুযোগ দেন।
সেই থেকে এ্যাম্বুলেন্স তিনিই চালান, বেতন-ভাতা বা সরকারী সুযোগ-
সুবিধার বিপরীতে সামান্য যা মজুরী পান তাতে কোন রকম চলছে সংসার। তবে
এখন ভাল নেই সেই এ্যাম্বুলেন্স চালক শৈলকুপার নগরপাড়ার স্বপন। করোনায়
হাসপাতালের গাড়ি চালানো যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। করা হয়েছে হত্যা
প্রচেষ্টা আর এখনো চলছে চোখ রাঙ্গানী, হুমকি-ধামকি ।
রবিবার বিকালে শৈলকুপা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্বপন অভিযোগ করেন,
করোনার সময়ে হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালানোর কারণে তাকে হামলা করে হত্যার
চেষ্টা করেছিল এ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্যের সিন্ডিকেট, আবার হামলা হতে পারে,
নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সামছুদ্দোহা স্বপন জানান, চলতি বছরের গত ১৮ জানুয়ারী
তারিখে শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্সে একজন মুমুর্ষ রোগী কুষ্টিয়া
হাসপাতালে দিয়ে রাত ১০টার দিকে শৈলকুপা হাসপাতালে ফেরেন। এরপর গাড়িটি
হাসপাতাল গ্যারেজে রেখে যখন সেখানে বিশ্রাম করিছিলেন তখন অতর্কিতে
একদল চিহ্নিত, দুর্বৃত্ত-সন্ত্রাসী তার উপর হামলা চালায়, হত্যার চেষ্টা করে। মাথা লক্ষ
করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারে। ঠেকাতে গেলে তার বাম হাতের ৩টি আঙ্গুল
সম্পূর্ণ কেটে পড়ে। শুধু তাই নয় উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত ও হামলায় সারা শরীর রক্তাক্ত
যখম হয়। অব্যহত রক্তক্ষরণে ডাক্তারা তাকে ফরিদপুর মেডিকেলে, সেখান থেকে ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এরপর ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করে। দারিদ্র
মাইক্রোচালক স্বপন টানা ২সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকেন। এখন সুস্থ হয়েছেন
বটে কিন্তু পঙ্গু হয়ে আছেন, এক হাত প্রায় অচল।
স্বপন সাংবাদিকদের জানান, সেই করোনা মহামারির সময়ে গাড়ি চালানোর
ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহযোগীতা- সহানুভ’তির চোখে দেখলেও ক্ষুব্ধ
হয়েছিলেন হাসপাতালের নিয়োগ প্রাপ্ত ড্রাইভার বকুল সহ এ্যাম্বুলেন্স বানিজ্যের
একটি চক্র। তারপরে বকুলের নেতৃত্বে স্ব-দলবলে এমন হামলা চালানো হয়েছিল। এ
ঘটনায় বকুল মিয়া, তার ছেলে মিল্টন মিয়া ও রাব্বি ওরফে রাব্বুল সহ অজ্ঞাত
কয়েকজন কে আসামী করে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় বকুল সহ কয়েকজনের
বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টার মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে ৩ আসামীর বিরুদ্ধে
চার্জশীট দিয়েছে। তবে আসামীরা জামিনে এসে ফের বে-পরোয়া হয়ে উঠেছে
বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান স্বপন।
আসামীরা জামিনে এসে ফের হামলা ও জীবননাশের চক্রান্ত করছে বলে আশংকা
প্রকাশ করছেন তিনি। সাম্প্রতি হাসপাতাল গ্যারেজ এলাকায় মাঝে-মধ্যে কতিপয়
ব্যক্তি সহ আসামীদের ঘোরাঘুরি খুবই সন্দেহজনক এবং ফের টার্গেট করছে বলে
জানান।
স্বপন অভিযোগ করেন, এসব আসামী সহ দুর্বৃত্ত সিন্ডিকেট চায়, যেন তিনি
হাসপাতালের জরুরী সেবার এ্যাম্বুলেন্স না চালান। তার কারণে সিন্ডিকেটের
এ্যাম্বুলেন্স বানিজ্য বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এসব কারণে হত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ফের
হামলা ও জীবননাশের চেষ্টা করছে বলে শংকা প্রকাশ করেন। তবে মামলার তদন্তকারী
কর্মকর্তা শৈলকুপা থানার এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, করোনা সহ মানুষের
বিপদের মুহুর্তে এ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে সেবাদানকারী চালক স্বপনের উপর হামলা
মামলার তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হয়েছে। তবে নতুন করে কোন
সংশয় বা হুমকি পেলে থানায় জিডি গ্রহণ সহ সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে ।
ঝিনাইদহ