শৈলকুপার আশুর হাট পাখি গ্রাম পরিদর্শন করলেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল
স্টাফ রির্পোটার : ঝিনাইদহের শৈলকুপার আশুর হাট পাখি গ্রাম পরিদর্শন করলেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল । শুক্রবার পহেলা অক্টোবর বিকাল ৪ টার সময় জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল পাখি গ্রাম দেখতে আসেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইলিশায় রিছিল।
শৈলকূপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস।
সরকারি কমিশনার ভূমি (ল্যান্ড) এস, এম, সিরাজুস সালেহীন।
প্রায় সারা বছরই এই গ্রামের ফসলের মাঠ, পুকুরপাড়, আম, কাঁঠাল, শিমুল, তেঁতুল, খেজুর, তালগাছ আর বাঁশঝাড় সবখানেই হরেক প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। দেশীয় নানা প্রজাতির পাখির সঙ্গে শীতের শুরুতেই এসে যোগ দেয় ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি। ফলে পুরো শীতকালজুড়ে এ গ্রামে দেখা যায় দেশি-বিদেশি পাখির মিতালি। পাখি দেখতে প্রতিদিনই আসেন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা। এ নিয়ে শীতকালটায় গ্রামবাসীর মধ্যে থাকে এক অন্য ধরনের আমেজ। এতে করে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আশুর হাট নামে এই গ্রামটি এখন পরিচিত ‘পাখি মেলা’ হিসেবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে ওই গ্রাম ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ গ্রামের বিভিন্ন খাল, পুকুর, ঝাড় ও গাছে পাখিদের বিচরণ ও আবাস। ফলে প্রতিদিন পাখির কিচিরমিচির শব্দে আর কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে গ্রামবাসীর। এ সময় জেলা প্রশাসক সমিতির সদস্য ও গ্রামবাসীদের কে পাখি রক্ষায় এগিয়ে আসাতে এবং গ্রাম পুলিশদেরকে পাখি রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন করতে বলেন। এব্যাপারে সার্বক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ ও প্রশাসনের সাথে একযোগে কাজ করতে বলেন।
এই পাখি গ্রামের মানুষেরাও প্রকৃতিপ্রেমী। পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে পাখি রক্ষায় নানা উদ্যোগও নিয়েছেন তারা। ফলে পাখির অভয়ারণ্য হয়ে ওঠা আশুর হাঁটে প্রতিদিন আসছেন পর্যটকরা।
এলাকাবাসী জানান, ঝিনাইদহ জেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার এবং শৈলকূপা উপজেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নিভৃত এই গ্রামে ২০০৭ সালের দিকে প্রথম পরিযায়ী পাখির আনাগোনা শুরু হয়। সেইসঙ্গে আগে থেকেই এখানে দেশীয় প্রজাতির আধিক্য ছিল। প্রথম প্রথম অনেকেই আশপাশের গ্রাম থেকে এ গ্রামে পাখি শিকার করতে আসলেও এলাকাবাসীর বাধার মুখে ব্যর্থ হন। পরে পুরো গ্রামের লোকজন পাখি নিধন বন্ধে গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যানার, সাইনবোর্ড টাঙান। একপর্যায়ে পাখি রক্ষায় তারা স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তা নেন। পরবর্তী সময়ে গ্রামের যুবকরা নিজেদের উদ্যোগে গ্রামটিকে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল (অভয়াশ্রম) হিসেবে ঘোষণা করেন।
এদিকে, পাখির সার্বিক নিরাপত্তা ও বংশবিস্তারে স্থানীয়োদের সমন্বয়ে ২০১৩ সালে ২০ সদস্য বিশিষ্ট আশুর হাট পাখি সংরক্ষণ সমিতি গঠিত হয়, পরিবেশবাদী একটি সংগঠন। এই সংগঠনের কর্ণধার আব্দুর রাজ্জাক নামে স্থানীয় এক পাখি প্রেমী। গ্রামের পাখিপ্রেমী আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষক আকমল হোসেন জানান, প্রতিবছর পরিযায়ী পাখিরা এ সময় আসে এবং কিছু পাখি এখানে থেকে যায় সে পাখিরা শ্রাবণে ডিম দেয় ঝ বাচ্চা ফুটায় আর বাচ্ছা পরিপূর্ণ হতে তিন মাস সময় লাগে। এসব পাখির বিষ্ঠা নিয়ে কিছুটা বিপত্তি ঘটলেও এখন তারা সব সয়ে গেছেন। গ্রামের সবাই পাখির প্রতি মমতাশীল।
এদিকে, দিন দিন ‘পাখি গ্রামের’ পরিচিতি বাড়তে থাকায় এখন অনেকেই আসেন পাখি দেখতে। শৈলকুপা শহর থেকে পাখি দেখতে আসা শাহীন আক্তার পলাশ, বিথি খাতুন, শারমিন নাহার জানান, পাখি দেখে তারা মুগ্ধ। পাখি দেখতে দর্শনার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার বলে তারা মন্তব্য করেন।