শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন উদ্দীপনা: সহপাঠীদের শেখানোর ‘পিয়ার পদ্ধতি’ বদলে দিচ্ছে শ্রেণিকক্ষের চিত্র
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে একটি উদ্ভাবনী ও কার্যকর কৌশল—পিয়ার পদ্ধতি বা Peer Learning Method। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা নিজেরা একে অপরকে শেখায়, আলোচনা করে এবং দলগতভাবে সমস্যার সমাধান করে—ফলে কেবল পাঠ্যবইয়ের মুখস্থনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে বাস্তবধর্মী ও কার্যকর শিক্ষা অর্জিত হয়।
ঢাকার একটি সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরজাহান বেগম বলেন,
> “আমরা যখন পিয়ার পদ্ধতি চালু করি, প্রথমে শিক্ষার্থীরা একটু দ্বিধায় ছিল। কিন্তু এখন তারা নিজেরা নিজেরা পড়া বোঝে, বিতর্ক করে, এমনকি ছোট ছোট উপস্থাপনাও করে। এতে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে।”
কী এই পিয়ার পদ্ধতি?
‘পিয়ার’ অর্থ সহপাঠী বা সমমনা। এই পদ্ধতিতে শিক্ষক মূলত সহায়ক বা গাইডের ভূমিকায় থাকেন। শিক্ষার্থীরা নিজেরা দল গঠন করে বিষয়বস্তুর গভীরে প্রবেশ করে, নিজেদের ভাষায় ব্যাখ্যা করে, এবং সমস্যার যৌথ সমাধান করে। এতে কেবল তথ্য শেখা নয়, বরং বিশ্লেষণ ও সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তিও গড়ে ওঠে।
সাফল্যের চিত্র:
চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসায় পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি চালু করার পর দেখা গেছে,
শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি ৩৫% কমেছে
ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ফলাফল বেড়েছে গড়ে ২০%
পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে
একটি সূত্র জানান,
> “আগে যারা ক্লাসে চুপ থাকত, এখন তারাই দলনেতা হয়ে অন্যদের শেখায়। এটা দারুণ একটা পরিবর্তন।”
শিক্ষাবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি:
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সাবেক সদস্য অধ্যাপক রেহান কবির বলেন,
> “শুধু মুখস্থ নয়, শেখার জন্য সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। পিয়ার পদ্ধতি শিক্ষাকে বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত করে।”
চ্যালেঞ্জও আছে:
তবে সবার আগে দরকার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। অনেক শিক্ষকই এখনও এই পদ্ধতির সঙ্গে পুরোপুরি পরিচিত নন। তাছাড়া, অনেক সময় দলভিত্তিক কার্যক্রমে মনোযোগের অভাব বা সময় ব্যবস্থাপনার সমস্যা দেখা দেয়।
‘পিয়ার পদ্ধতি’ এখন আর কেবল একটি শিক্ষাবিষয়ক ধারণা নয়—এটি হয়ে উঠছে শ্রেণিকক্ষ পরিবর্তনের হাতিয়ার। ভবিষ্যতের জন্য গঠনমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক গঠনে এই পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এখন সময় এসেছে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই উদ্ভাবনী কৌশল ছড়িয়ে দেওয়া।