শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে বার্ষিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশই বেশি দায়ী”— এই বিতর্কিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহের শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো বার্ষিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা। শিক্ষার্থীদের ক্ষুরধার যুক্তি, পাল্টা যুক্তি এবং প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম ছিল মুখরিত।
বুধবার দুপুর ২ টার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শৈলকূপ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ বাকী বিল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ মতিয়ার রহমান। প্রতিযোগিতার বিষয় নির্ধারণ করা হয় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত সংকট জলবায়ু পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। প্রতিযোগিতায় (ক ও খ ) দুটি গ্রুপ অংশগ্রহণ করে— ‘পক্ষে’ ও ‘বিপক্ষে’।
‘পক্ষে’ দলের বক্তারা তাদের যুক্তিতে বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, বন উজাড় এবং পরিবেশগত আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনে তাদের দায় বাড়ছে। তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কার্বন নিঃসরণের হার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দ্রুতগতিতে বাড়ছে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করছে।
তবে তাদের যুক্তিকে খণ্ডন করে ‘বিপক্ষে’ দলের প্রতিযোগীরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মূল ঐতিহাসিক দায় উন্নত দেশগুলোর। শিল্প বিপ্লবের সময় থেকে শুরু করে বিগত দুই শতাব্দী ধরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার করে তারা বায়ুমণ্ডলে কার্বন জমা করেছে। বিপক্ষ দলের দলনেতা তার বক্তব্যে বলেন, “উন্নত দেশগুলোর মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের হার এখনও উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। তাদের ভোগবাদী জীবনযাত্রাই এই সংকটের মূল কারণ।”
প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা এই যুক্তিতর্কের লড়াইয়ে উভয় দলই চমৎকার তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি উপস্থাপন করে। বিচারকমণ্ডলী শিক্ষার্থীদের গবেষণালব্ধ তথ্য, সাবলীল বাচনভঙ্গি এবং যুক্তির গভীরতায় মুগ্ধ হন।
প্রতিযোগিতা শেষে বিদ্যালয়ের প্রধান অতিথি মোঃ বাকি বিল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, ” শিক্ষার্থীরা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো একটি জটিল ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে যেভাবে চিন্তা করছে এবং নিজেদের মতামত তুলে ধরছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। এই ধরনের আয়োজন তাদের চিন্তার জগৎকে প্রসারিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।”
তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই বিতর্কে বিচারকদের রায়ে বিজয়ী হয় ‘বিপক্ষে’ দল, যারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয় যে জলবায়ু পরিবর্তনে ঐতিহাসিক এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে উন্নত দেশগুলোর দায়ই সর্বাধিক। প্রতিযোগিতায় ক গ্রুপের শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় পক্ষ দলের দ্বিতীয় বক্তা সাংবাদিক কন্যা রুকাইয়া জান্নাত এবং খ গ্রুপের শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হন বিপক্ষের দলনেতা সুরাইয়া খুশবু।
অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এই আয়োজন শুধু একটি প্রতিযোগিতা ছিল না, বরং জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তরুণ প্রজন্মের ভাবনা ও ভূমিকার একটি চমৎকার প্রতিফলন ছিল।