শৈলকুপা(ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি ঃ ঝিনাইদহের শৈলকুপার ৭ নং হাকিমপুর ইউনিয়নের খুলুমবাড়ি আশ্রয়ন প্রকল্প ও সর্দার পাড়ার অসহায় গরীব শতাধিক পরিবারের ২শতাধিক লোকদের দিন কাটছে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ও কান্নার মধ্য দিয়ে ।অভিনব কায়দায় প্রতারকদের সিম প্রতারণার ফাঁদে পড়ে দুুশ্চিন্তায় জীবন যাপন করছে তারা।মিথ্যা মামলা সেইসাথে পুলিশের ভয়ে আতংকের মধ্যে দিন কাটছে তাদের। কোথা থেকে কোন অভিযোগ আসে এই চিন্তা তাদের মাথায় ভর করেছে।
জানা যায়,উপজেলার এই ইউনিয়নের খুলুমবাড়ি আশ্রয়ন প্রকল্প ও সর্দার পাড়ার ২ শতাধিক মানুষ আতংকের মধ্যে আছে।বছর খানেক আগে কয়েকজন লোক এলাকায় এসে সিম কার্ড এর মাধ্যমে বিকাশ হিসাব খোলার পরামর্শ দেয় এবং বলে কিছুদিনের মধ্যে বিকাশের মাধ্যমে এই সিমে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা প্রত্যেকে পাবে। এইজন্য প্রত্যেককে মেশিনে আঙ্গুলের ছাপ ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিতে হবে সিম তোলার জন্য এরপর তাদের কথামত মেশিনে তারা আঙ্গুলের ছাপ ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়ে সিম কার্ড তোলে আর এই সিম কার্ড তারা নিয়ে নেয় এবং বলে আমরা এখন সিম নিয়ে যাব কিছুদিন পরে এই সিমে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আসলে সিম ও টাকা একসংগে ফেরত দিব। এর কিছুদিন পর বিভিন্ন জায়গা থেকে সিম মালিকদের বিরুদ্ধে বিকাশ হিসাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আসতে শুরু করে । ইতিমধ্যে অনেকের নামে থানায় জিডি হয়েছে।এলাকার পলাশ কুমার, শাহিনা খাতুন, মানিক মন্ডল,জামাল জোয়ার্দার ,লিটন,অরুনা খাতুন, ছকিনা খাতুন, রাশিদা খাতুন, নাজমুল মন্ডল, আলাউদ্দিন,রিপন,রেশমা খাতুনসহ আশ্রয়ন প্রকল্প ও সর্দার পাড়ার শতাধিক পরিবারের ২ শতাধিক লোকেরা এই প্রতারক চক্রের কথামত নিজ নামে সিম তোলে আর প্রতারক চক্ররা সেই সিম নিয়ে বিকাশ হিসাব খোলে।
খুলুমবাড়ি আবাসন প্রকল্পের রেশমা নামে এক ভূক্তভোগী বলেন, ২দিন আগে থানা থেকে পুলিশ এসে আমাকে বলছে তোমার নামে ঢাকার সাভার থানায় জিডি হয়েছে। তুমি প্রতারণা করে বিকাশের মাধ্যমে সাভার থেকে এক ব্যক্তির ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছো।আমি বললাম আমি টাকা নেয়াতো দুরের কথা মোবাইল চালাই না। এরপর পুলিশ আমার থানায় যেতে বললে আমি থানায় যায় । আমরা এই প্রতারক চক্রের হাত থেকে বাঁচতে চাই। এখন আল্লাহর কাছে কাঁদা ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই।আমার গোসল খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলার খুলুমবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক পলাশ কুমার বলেন,বছর খানেক আগে আমাদের এলাকায় বেশকিছু অপরিচিত লোক এসে বলে মেশিনে আঙ্গুলের ছাপ ও ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে সিম তুলে বিকাশ হিসাব খুললে বিকাশের মাধ্যমে জন প্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।সেই মোতাবেক আমরা বুঝে ওঠার আগেই তাদের কথামত সিম তুলে তাদের কাছে দিই। কিছুদিন পর দেখা যায়, আমাদের প্রতিবেশী লিটন নামে একজনের ওই সিমে বিকাশের মাধ্যমে ৪৯হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠে। তার পর থানায় গিয়ে আমরা জিডি করি এবং ওই সিমগুলো বন্ধের আবেদন জানাই।
খুলুমবাড়ি আবাসন প্রকল্পের সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন, কয়েক মাস আগে মাদলা গ্রামের শাকের বিশ^াসের ছেলে পান্নু বিশ^াস কয়েকজন অপরিচিত লোক নিয়ে আমাদের আবাসনে আসে। তাদের নিয়ে আসা মেশিনে আমরা আঙ্গুলের ছাপ ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিই তারপর তারা আমাদের নামে সিম তুলে নেয় এবং বলে কিছুদিন পর সিম ও টাকা ফেরত দিব। এরপর প্রতারক চক্রের সদস্যদের আর দেখা নেই। এখন শুনছি ওই সিম ব্যবহার করে বিকাশ হিসাব খুলে তারা বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করছে আর দোষ হচ্ছে আমাদের। এই প্রতারণার শেষ কোথায় আমরা এই প্রতারকদের বিচার চাই। আমরা এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছি ।
উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান জিকু বলেন, বছর খানেক আগে আমাদের এই এলাকায় প্রতারক চক্র এসেছিল। ২ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে তাদের আনা মেশিনে আঙ্গুলের ছাপ ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নেয় এরপর সিম তুলে নিয়ে যায়। এখন শুনছি ওই সিম ব্যবহার করে বিকাশ খুলে বিভিন্ন লোকের কাছে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা নিচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকের নামে মামলাও হয়েছে। আমার এলাকার এসব মানুষ নির্দোষ।
এব্যাপারে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, এমন প্রতারনার কথা শুনেছি। আমরা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।