ইসলামী শিক্ষা বলতে আসলে কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষাকেই বুঝানো হচ্ছে। আর বলাবাহুল্য যে এ শিক্ষার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বেসর্বা আল্লাহর পরিচয় লাভ করা। আল্লাহর পরিচয় এবং তাঁর কাছে জবাবদিহিতার ভয় তথা তাকওয়াই পারে মানুষকে মানুষ বানাতে। একজন মুত্তাকী বা আল্লাহভীরু ব্যক্তি লোকসমাজে শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যা বলেই গণ্য হোন না কেন, তাঁর হাতে কেউ অনিষ্টের শিকার হবে না। তিনি যেদিকেই যাবেন শুধু আলোই ছড়াবেন। তাঁর হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে পরিবেশ, প্রতিবেশি ও প্রাণীকুল- সবই নিরাপদ থাকবে। তাঁর মহানুভতার কাছে হার মানবে উদ্ধত স্বৈরাচারি থেকে নিয়ে বনের বাঘ ও সরিসৃপরা পর্যন্ত।
মিকদাদ ইয়ালজিন বলেন: ’ইসলামের আনীত আকীদা, মূল্যবোধ ও শিক্ষাদান পদ্ধতির জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ের জন্য সব দিক থেকে মুসলিমকে পরিপূর্ণরূপে গড়ে তোলা।’ [মিকদাদ ইয়ালজিন, পৃষ্ঠা : ২০]
আবদুর রহমান নকীব বলেন: ‘ইসলামী শিক্ষা বলতে ওই শিক্ষা ব্যবস্থা যার লক্ষ্য কুরআন ও সুন্নাহর চরিত্র তৈরি করা, যার অল্পেরই তা পেশা হয়ে থাকে।’ [আবদুর রহমান নকীব, ১৭]
দুইয়ের মধ্যে ফারাক:
ইসলামী তথা কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে জানা, তাঁর একত্ববাদ তথা তাওহীদকে জানা, এককভাবে তাঁর ইবাদত করার পদ্ধতি শেখা। এ লক্ষ্যেই দুনিয়া এবং এর মধ্যস্থিত সবকিছুকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কারণেই জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আধুনিক জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য, ওই অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য মাধ্যম হিসেবে নশ্বর বস্তুবাদী সুবিধা অর্জন। আর এ দুই উদ্দেশ্যের মাঝে ফারাক ইউসুফ আলাইহিস সালামকে ক্রয় ও গুটিকতক দিরহামের মাঝে যে তফাৎ সে তফাৎ। এ দুটির ফারাক হলো, আল্লাহর যিকর ও তাঁকে ভালোবাসা এবং পানাহার ও পরিধানের মাঝে যতটুকু তফাৎ ঠিক ততটুকু। দ্বিতীয়টি, আল্লাহ্ যাদেরকে ভালোবাসেন অথবা যাদেরকে ভালোবাসেন না, সবাই পেতে পারে। কিন্তু প্রথমটি কেবল আল্লাহ যাদেরকে ভালোবাসেন তারাই পেয়ে থাকে। এতেই বুঝা যায় কোন জ্ঞান অগ্রাধিকার পাবার যোগ্য? এবং দুটির মর্যাদার তারতম্য কতটুকু?
হ্যা, মুসলিমকে প্রয়োজনীয় আধুনিক জ্ঞানও শিখতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করাও তার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। সুতরাং তার উচিত উল্লেখিত হবে তারতম্যটাকে মাথায় রেখে এ দুটোর ওপরই গুরুত্ব দেয়া। উদাহরণত যদি কোনো ছাত্র গণিত, কৃষিশিক্ষা ও রসায়ন অধ্যয়নে এক ঘন্টা সময় ব্যয় করে তাহলে কুরআন, হাদীস ও ফিকাহ অধ্যয়নে তার ন্যূনতম দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করা উচিত। এর বিপরীতটা করা সমীচীন হবে না। অর্থাৎ অগ্রাধিকার দিতে হবে ইসলামী তথা দুনিয়া ও আখিরাত- উভয় জগতের কল্যাণদাতা কুরআন ও সুন্নাহ কেন্দ্রীক জ্ঞানকে। ফরয ইলম অর্জন সবাইকেই করতে হবে। আর বিশেষজ্ঞতা অর্জন করতে হবে কতিপয়কে। অনুরূপ জাগতিক স্বার্থ ও কল্যাণ সংক্রান্ত জ্ঞানেও কিছু লোককে প্রাজ্ঞতা ও উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। যারা ফরয ইলম অর্জন করে মানুষের খেদমত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে নিজের মেধা ও শ্রম দেবেন জাগতিক প্রয়োজন পূরণে যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণা-আবিস্কারের পেছনে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তাই মুসলিমদের সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসে অবশ্যই প্রয়োজন পরিমাণ ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ইসলামের শিক্ষাশূন্য কোনো ব্যবস্থা মুসলিমের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।