এটিএম আজহারুলের মুক্তির দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ
নিজস্ব সংবাদদাতা : জামায়াতের নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত।
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঝিনাইদহে এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।দীর্ঘ ১২ বছর ধরে জামায়াতের এই নেতা কারাগারে রয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় ঝিনাইদহ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়ে পায়রা চত্বরে এসে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঝিনাইদহ জেলা আমীর অধ্যাপক আলী আজম মোঃ আবু বক্কর।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের আজ ৬ মাস ১০ দিন অতিবাহিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে এই প্রথম আজ জামায়াতে ইসলামী রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর দেশবাসী আশা করেছিল তারা সকল প্রকার জুলুম নির্যাতন থেকে রেহাই পাবে। যারা মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক ছিলেন তারা মুক্তি পাবে। কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের পর ফাঁসির আসামীসহ অনেকেই মুক্তি পেলেও জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পাননি। তার মুক্তি না হওয়ায় দেশবাসী বিস্মিত ও হতবাক।
বক্তারা বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে ন্যূনতম চিকিৎসা সেবাটুকুও দেয়া হয়নি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালে তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করার পর নিজ বাসায় অবস্থানকালে পুলিশ তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে রাখে।
বক্তারা আরো বলেন, আওয়ামী সরকার দলীয় লোকদের দ্বারা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো সাক্ষ্য প্রদান করে। একজন সাক্ষী আদালতে বলেছেন যে, তিনি ৭ কিলোমিটার দূর থেকে এবং অপর আরেক সাক্ষী বলেছেন যে, তিনি ৩ কিলোমিটার দূর থেকে ঘটনা দেখেছেন। সাক্ষীদের এই বক্তব্য অবাস্তব ও হাস্যকর। আরেকজন সাক্ষী নিজেকে আজহারুল ইসলামের ক্লাসমেট দাবি করে আদালতে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। আদালতে উপস্থাপিত ডকুমেন্ট অনুযায়ী আজহারুল ইসলাম ১৯৬৮ সালে কারমাইকেল কলেজ ত্যাগ করেন। আর কথিত সাক্ষী ১৯৭০ সালে কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। অতএব, আজহারুল ইসলামকে ওই সাক্ষী তাঁর ক্লাসমেট হওয়ার যে দাবি করেছেন, তা মিথ্যা। এ ধরনের মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
বক্তারা বলেন, আজহারুল ইসলাম ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। আপিল বিভাগের চারজন বিচারপতির মধ্যে তিনজন বিচারপতি ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখলেও একজন বিচারপতি এ রায়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। আজহারুল ইসলাম সেখানেও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন।
২০২৪ সালে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। দেশ স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্তিলাভ করে। রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় ফ্যাসিস্ট সরকারের গ্রেফতারকৃত অনেক নেতাকর্মী মুক্তিলাভ করেন। রাষ্ট্রপতির আদেশে অনেককে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দেওয়া হয়। দেশবাসী আশা করেছিল যে, চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার এটিএম আজহারুল ইসলাম স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে মুক্তিলাভ করবেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের ৬ মাস ১০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পাননি। জামায়াত স্বৈরশাসনামলে জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আর স্বৈরশাসনমুক্ত বাংলাদেশে জামায়াত এখনো বৈষম্যের শিকার।
বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচারিক কার্যক্রম সারা বিশ্বে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত। স্বৈরাচারের আমলে গ্রেফতারকৃত এটিএম আজহারুল ইসলামকে কারাগারে আটক রাখা তার প্রতি চরম জুলুম ও অন্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়।