শৈলকুপায় সেচ প্রকল্পের সৌর প্যানেল ভাঙচুর: মাঠের ৩০ বিঘা ধানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
নিজস্ব সংবাদদাতা:
ঝিনাইদহের শৈলকুপার গোবিন্দপুর গ্রামের মধ্যে পাড়ায় সৌরবিদ্যুৎ-চালিত একটি সেচ প্রকল্পে মঙ্গলবার রাতের ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯ টি প্যানেলে প্রায় ৭০ টি কোপের দাগ দেখা গেছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এই মাঠের ৩০ বিঘা জমির ধানের চাষ । একদিন সেচ বন্ধ থাকায়, খর রৌদ্রতাপে মাঠ ফাটতে শুরু করেছে। এতে করে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ধানের ভবিষ্যৎ। যে কারণে ৮ লক্ষ টাকার আরো ক্ষতি হতে পারে।
মালিক উসমান গনি বলেন, সেচ প্রকল্পটির সৌর প্যানেলের জন্য ৬ মাস আগে ২ লাখ টাকা খরচ করে স্থাপন করা হয়েছিল।
আমার পাশের জমির মালিক আমিরুল আমার এই সেচ প্রকল্পের ফিতা এর আগে ৪ বার কেটে দিয়েছে, যা আমি দেখেছিলাম। বিভিন্ন সময় সে ফিতা কাটার ঘটনায় সে পরে মাফও চেয়েছে। এছাড়া বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের দাপটে আমাদের বহু ক্ষয়ক্ষতি সে করেছে। সর্বশেষ ফিতা কাটার পর এই ঘটনার বিচার চেয়ে স্থানীয় মেম্বার খিলাফত হোসেনের, নিকট সালিশ দিয়েছিলাম, সে তার সামাজিক দল করে।
ঘটনার দিন রাতে রাত ১২টা দিকে আমি এখান থেকে বাড়ি চলে যায়, পরে সকালে আমি ও আব্দুল মালেক এসে দেখি আমার ৯টি সোলার প্যানেলে ৭০ টির মত কোপ। বোঝা যাচ্ছে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এটা কোপানো হয়েছে। এছাড়াও মটরের যে টিনের সেডের ঘর রয়েছে সেটিও কোপানো হয়েছে। এই ঘটনা জানাজানি হলে, আশপাশ গ্রামের লোকেরা দেখতে আসে, আমি তাদের কাছে বিহীত কামনা করি, আমি আরিফুলকে এই ঘটনায় সন্দেহ করি।স্থানীয় ৩ গ্রামের গণ্যমান ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায়, সিদ্ধান্ত হয়, যেহেতু সোলার প্যানেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা সোলার প্যানেল ঠিক করে দেবে। আরিফুল এবং তার বাবা এটা সচল করার জন্য কয়েকদিন সময় প্রার্থনা করে। সকলের সোমবার পর্যন্ত সময় দেন।
মানিক ওসমান মন্ডল আরও বলেন, “অনেক কষ্ট করে এই প্রকল্পটা শুরু করেছিলাম। আজ সব কিছু শেষ হয়ে গেলো। আমি এখন কী করবো বুঝতে পারছি না।”
অপরদিকে অভিযুক্ত আরিফুল ইসলাম বলেন, সোলার প্যানেল ভাঙচুর করেনি, তার নামে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হচ্ছে।
ফিতা কাটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেন, ভুট্টা কাটতে গিয়ে কেটে যেতে পারে। এবং সে দাবী করে, তাদের কাছে ২ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। তারা প্যানেল ঠিক করে দিতে স্বীকার করেনি ।
যদিও সালিশের একাধিক মাতব্বর নিশ্চিত করেছে তারা একটি স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছিল।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রকল্পটি নষ্ট হওয়ায় ৩০ বিঘা জমির ধানচাষ এখন চরম হুমকির মুখে পড়েছে। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার ফসল ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং সেচ ব্যবস্থাপনা নিয়ে পূর্ব বিরোধ থেকেই এই ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা। বিষয়টি নিয়ে পূর্বে স্থানীয় মাতব্বরদের উপস্থিতিতে সালিশ বসেছিল, যেখানে শহীদনগর, সুবিধা ও গোবিন্দপুর গ্রামের প্রধান মাতব্বররা উপস্থিত ছিলেন।
সালিশে মোট ৪০ জনেরও বেশি মাতব্বর উপস্থিত ছিলেন এবং অভিযুক্তদের পূরণের অনুরোধ জানিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ৬-৭ দিনের সময় চান। তবে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। স্থানীয় মাতব্বরদের উদ্যোগে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্লকের অন্তর্ভুক্ত চাষিরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “রোদে মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে, পানির অভাবে ধান মরছে। এখন যদি সেচ না পাই, তাহলে আমাদের খাওয়ার মতো কিছুই থাকবে না।”
এ ধরনের ঘটনায় শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো এলাকার কৃষি ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে, এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে কৃষকদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।