সম্পাদকঃ
দারস: সূরা বনি ইসরাঈল (আয়াত ৭৭-৮৮)
বিষয়: ঐশী বিধান, সত্যের বিজয় ও কুরআনের মাহাত্ম্য
ভূমিকা ও প্রেক্ষাপট
আসসালামু আলাইকুম। আজ আমরা পবিত্র কুরআনের মাক্কী সূরা ‘বনি ইসরাঈল’ বা ‘আল-ইসরা’-এর একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে আলোচনা করব। এই সূরাটি নবুয়তের দশম বা একাদশ বছরে, রাসূল (সা)-এর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে নাযিল হয়। চাচা আবু তালিব ও প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রা)-এর ইন্তেকাল এবং তায়েফের হৃদয়বিদারক ঘটনার পর যখন তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তখন আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকে ইসরা ও মি’রাজের মাধ্যমে সম্মানিত করেন এবং এই সূরা দ্বারা সান্ত্বনা ও ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা দেন।
‘বনি ইসরাঈল’ নামটি এই সূরায় ইহুদি জাতির উত্থান-পতনের ইতিহাস বর্ণনার কারণে হয়েছে, আর ‘আল-ইসরা’ নামটি রাসূল (সা)-এর অলৌকিক নৈশভ্রমণের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে।
আয়াত ৭৭-৮৮ এর মূল শিক্ষা
আলোচ্য আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী (সা) এবং মুমিনদের জন্য কয়েকটি চিরন্তন বার্তা দিয়েছেন:
১. আল্লাহর অপরিবর্তনীয় নীতি (আয়াত ৭৭): আল্লাহ এখানে তাঁর একটি বিধান স্মরণ করিয়ে দেন যে, যে জাতি তাদের নবীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে, তারাও সেখানে বেশিদিন টিকতে পারে না। এটি ছিল মক্কার কাফিরদের জন্য একটি পরোক্ষ সতর্কবার্তা।
২. আধ্যাত্মিক শক্তির উৎস (আয়াত ৭৮-৭৯): প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য আল্লাহ সালাতকে প্রধান অবলম্বন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এখানে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় এবং বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর বিনিময়ে আল্লাহ রাসূল (সা)-কে “মাকামে মাহমুদ” বা সর্বোচ্চ প্রশংসিত স্থানের সুসংবাদ দিয়েছেন।
৩. সত্যের বিজয় ও কুরআনের শক্তি (আয়াত ৮০-৮২): এই আয়াতগুলোতে বিজয়ের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন: “হে আমার রব! আমাকে সত্যের সাথে প্রবেশ করাও এবং সত্যের সাথে বের করো।” এরপর সেই বিখ্যাত ঘোষণা: “সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে; আর মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।” (আয়াত ৮১)। এই আয়াতগুলো কুরআনকে মুমিনদের জন্য ‘শিফা’ (আরোগ্য) ও রহমত হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।
৪. কুরআনের অলৌকিকত্ব (আয়াত ৮৫-৮৮): সবশেষে, রূহ বা আত্মা বিষয়ক প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাবের মাধ্যমে মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে আল্লাহ কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেছেন। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন যে, সমগ্র মানবজাতি ও জিন জাতি একত্রিত হলেও কুরআনের মতো একটি গ্রন্থ রচনা করতে সক্ষম হবে না।
উপসংহার
এই আয়াতগুলো আমাদের শেখায় যে, বাহ্যিক পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন, সালাত ও কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করলে বিজয় অবশ্যম্ভাবী। কারণ সত্য চিরস্থায়ী এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হতে বাধ্য। আল্লাহ আমাদের এই শিক্ষা উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। আমীন।